খেয়াল আছে গতবছর গরমের ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে গিয়েছিলাম? তখন মামাতো বোন বায়না ধরলো জামাই আদর ফল খাবে। আমি তো প্রথমে টেনশনে পড়ে গেলাম, জামাই আদর আবার কোন ফল! পরে দেখি, আরে এ তো আমাদের অতি পরিচিত জামাইদের প্রিয় ফল মানে আমাদের সবার প্রিয় ফল "জাম"।

তখন মামাতো বোন বলেছিল, "দাদাভাই, জাম তো খাবি, সাথে কিন্তু জামের বোনকেও খেতে হবে।" আমি তো আবারও টেনশনে, জামের আবার বোন কে? পরে দেখি, মামাতো বোন হাসতে হাসতে বলছে, "আরে বোকা, জামের বোন হলো জামের বীজ।"

শুনেই বুঝে গেলাম এ নিশ্চয়ই আরও উপকারী কিছু হবে। আমি আবার একটু স্বাস্থ্য সচেতন কিনা! তাই দেরি না করে ভাবলাম, জামের বোন যখন এত উপকারী, তখন জামের সাথে সাথে এর পুরো পরিবার নিয়ে একটু গবেষণা করে ফেলি।

যেমন ভাবা তেমন কাজ। বাড়িতে ফিরেই শুরু করলাম খোঁজ খবর নেওয়া।

তখন জানতে পারলাম, জাম ফলের যেমন উপকারিতা আছে, তেমনি এর বীজেরও অনেক গুণ। আর এই পরিবারের আরও একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হলো সংরক্ষিত জাম মানে আমাদের সবার পরিচিত জামের রস বা সংরক্ষিত জাম।

তখন মনে হল, জামের বোন যখন এত উপকারী, তখন জামের সাথে সাথে এর পুরো পরিবার নিয়ে একটু গবেষণা করে ফেলি।

যেমন ভাবা তেমন কাজ। খোঁজ খবর নিতে নিতে জানতে পারলাম, শুধু জাম বা জামের বীজ নয়, এর থেকে তৈরি জামের রস বা সংরক্ষিত জাম এর ও অনেক উপকারিতা আছে।

তখন ভাবলাম, আরে! এটা তো দারুণ একটা ব্যাপার। হাতের কাছেই তো রয়েছে, শুধু জানতে হবে আর কাজে লাগাতে হবে।

যেমন ভাবা তেমন কাজ। বাজার থেকে কিনে আনলাম কিছু জাম। বাড়িতেই বানিয়ে ফেললাম জামের রস বা সংরক্ষিত জাম।

1সংরক্ষিত জাম তৈরির পদ্ধতি

• প্রথমে, পাকা জামগুলোকে ভালো করে ধুয়ে নিলাম।
• তারপর, জামের দানাগুলো ছাড়িয়ে, শুধু পাল্প বা নির্যাসটা আলাদা করে নিলাম।
• এবার, পাল্পটাকে একটা ব্লেন্ডারে দিয়ে ভালো করে ব্লেন্ড করে নিলাম, যতক্ষণ না একটা মসৃণ মিশ্রণ তৈরি হয়।
• এই মিশ্রণটাকেওও ছাঁকনি দিয়ে ছেঁকে নিলাম, যাতে কোন খোসা বা আঁশ না থাকে।
• এবার, এই রসে সামান্য চিনি বা মধু আর স্বাদমতো নুন মেশালাম।
• সবকিছু ভালো করে মিশিয়ে, কাঁচের বোতলে ভরে ফ্রিজে রেখে দিলাম।

ব্যস, তৈরি হয়ে গেল আমার নিজের হাতে বানানো জামের রস বা সংরক্ষিত জাম।

সংরক্ষিত জাম বানানোর পর ভাবলাম, শুধু বানালেই তো হবে না, এর উপকারিতাগুলোও তো জানতে হবে, তাই না? তাই আবারও শুরু করলাম পড়াশোনা।

তখন জানতে পারলাম, সংরক্ষিত জাম নিয়মিত খেলে -

• রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে।
• হজমের সমস্যা দূর হয়।
• ত্বক ও চুল ভালো থাকে।
• রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।
• হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমে।

তবে হ্যাঁ, যাদের কিডনির সমস্যা আছে বা যারা অ্যালার্জির সমস্যায় ভোগেন, তাদের কিন্তু সংরক্ষিত জাম খাওয়ার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

যাইহোক, নিজের তৈরি সংরক্ষিত জাম খেয়ে আর এর উপকারিতা জেনে আমি তো মহাখুশি! আপনারাও চাইলে বাড়িতেই বানিয়ে ফেলতে পারেন এই স্বাস্থ্যকর পানীয়।